এম.এন.সাকিব ভূইয়া: বাংলা সাহিত্যের মুসলিম শক্তিমান কবি ফররুখ
আহমেদ।যার কবিতা মুসলিম চেতনাকে জাগ্রত করার এক মন্ত্র।বাংলার সাথে আরবি-ফার্সি ভাষার
নিপুন বুনন তাঁর কবিতায় এক অনন্য উচ্চতায় আসিনক করে। কাজি নজরুর ইসালমের পর তাকে স্থান
দেওয়া কোনো অংশে কম নয়। ফররুখ আহমেদ জন্ম ১৯১৬ মাগুরে জেলায়।কলকাতা রিপন করেজ থেকে
আইএ এবং কলকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শনে অনার্স। চল্লিশের দশেকে তার প্রথম কাব্য
‘সাত সাগরে মাঝি’ প্রকাশিত হয়।বাংলা সাহিত্যে এক অমর সৃষ্টি্ সূচিত।‘পাজ্ঞেরি’ কবিতা
এই কাব্যের অন্তর্ভক্ত। ঘুমন্ত যুবাদের জাগ্রত করার প্রেমময় আবেদনমূল কবিতার মধ্যে
ফররুখ আহমেদের ‘পাজ্ঞেরি’ অন্যতম।
পাঞ্জেরি
ফররুখ আহমেদ
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলার এখনো ওঠেনি জেগে?
তুমি মাস্তলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি।
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
দীঘল রাতের শ্রান্তসফর শেষে
কোন দরিয়ার কালো দিগন্তে আমরা পড়েছি এসে?
এ কী ঘন-সিয়া জিন্দেগানীর বা’ব
তোলে মর্সিয়া ব্যথিত দিলের তুফান-শ্রান্ত খা’ব
অস্ফুট হয়ে ক্রমে ডুবে যায় জীবনের জয়ভেরী।
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
সম্মুখে শুধু অসীম কুয়াশা হেরি।
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
বন্দরে বসে যাত্রীরা দিন গোনে,
বুঝি মৌসুমী হাওয়ায় মোদের জাহাজের ধ্বনি শোনে,
বুঝি কুয়াশায়, জোছনা- মায়ায় জাহাজের পাল দেখে।
আহা, পেরেশান মুসাফির দল।
দরিয়া কিনারে জাগে তক্দিরে
নিরাশায় ছবি এঁকে!
পথহারা এই দরিয়া- সোঁতারা ঘুরে
চলেছি কোথায়? কোন সীমাহীন দূরে?
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
একাকী রাতের গান জুলমাত হেরি!
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
শুধু গাফলতে শুধু খেয়ালের ভুলে,
দরিয়া- অথই ভ্রান্তি- নিয়াছি ভুলে,
আমাদেরি ভুলে পানির কিনারে মুসাফির দল বসি
দেখেছে সভয়ে অস্ত গিয়াছে তাদের সেতারা, শশী।
মোদের খেলায় ধুলায় লুটায়ে পড়ি।
কেটেছে তাদের দুর্ভাগ্যের বিস্বাদ শর্বরী।
সওদাগরের দল মাঝে মোরা ওঠায়েছি আহাজারি,
ঘরে ঘরে ওঠে ক্রন্দনধ্বনি আওয়াজ শুনছি তারি।
ওকি বাতাসের হাহাকার,- ও কি
রোনাজারি ক্ষুধিতের!
ও কি দরিয়ার গর্জন,- ও কি বেদনা মজলুমের!
ও কি ধাতুর পাঁজরায় বাজে মৃত্যুর জয়ভেরী।
পাঞ্জেরি!
জাগো বন্দরে কৈফিয়তের তীব্র ভ্রুকুটি হেরি,
জাগো অগণন ক্ষুধিত মুখের নীরব ভ্রুকুটি হেরি!
দেখ চেয়ে দেখ সূর্য ওঠার কত দেরি, কত দেরি!!
এভাবে কবি তারুণ্যের শক্তিকে আঁধার টুটে আলো আনার নির্ভীক প্রেরণা দেন। নিঃশ্বন্দেহে একথা বলা যার, চলমান আগ্রাসন বলি থেকে উত্তরণে তারুণ্যের জাগরণ এই কবিতায় দিগ্বিবিজয় কর্ম প্রেরণার মাইলফলক। আজ জাতির ঘন আপদের সময়ে কবির ৬৪তম প্রয়াণ দিবসে কবির প্রতি আমাদের ভালবাসা ও দোয়া।